রক্তের কাজগুলি কী কী?


রক্তের কাজগুলি এবং উপাদানসমূহ সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো:

রক্ত মানবদেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি তরল যোজক কলা যা সারা শরীরে পুষ্টি, অক্সিজেন, এবং বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহ করে এবং বর্জ্য পদার্থ অপসারণ করে। রক্তের প্রধান উপাদানগুলি হলো রক্তরস (Plasma), লোহিত রক্তকণিকা (Erythrocytes), শ্বেত রক্তকণিকা (Leukocytes), এবং অণুচক্রিকা (Platelets)।

রক্তের উপাদানসমূহ ও তাদের কাজ

১. রক্তরস (Plasma):
রক্তের মোট পরিমাণের প্রায় ৫৫% অংশ রক্তরস, যা প্রায় ৯০% জল দিয়ে তৈরি। এতে প্রোটিন, লবণ, এনজাইম, হরমোন, গ্লুকোজ, এবং কোষের বর্জ্য পদার্থ থাকে। রক্তরসের প্রধান কাজ:

  • পুষ্টি সরবরাহ: খাদ্য থেকে প্রাপ্ত গ্লুকোজ, অ্যামিনো অ্যাসিড, ভিটামিন ইত্যাদি দেহের কোষে পৌঁছে দেয়।
  • বর্জ্য অপসারণ: কোষের বর্জ্য পদার্থ যেমন ইউরিয়া, কার্বন ডাই-অক্সাইড ইত্যাদি দেহ থেকে বের করতে সাহায্য করে।
  • হরমোন পরিবহন: রক্তরস হরমোন বহন করে বিভিন্ন গ্রন্থি থেকে টার্গেট কোষে পৌঁছে দেয়।
  • ইমিউন প্রতিক্রিয়া: অ্যান্টিবডি ও অন্যান্য প্রতিরোধী প্রোটিন রক্তরসে থাকে, যা দেহকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

২. লোহিত রক্তকণিকা (Erythrocytes):
লোহিত রক্তকণিকা রক্তের মোট কোষীয় উপাদানের প্রায় ৪৫% গঠন করে। এর মূল কাজ:

  • অক্সিজেন পরিবহন: লোহিত রক্তকণিকার ভেতর উপস্থিত হিমোগ্লোবিন অক্সিজেনের সাথে বন্ধন তৈরি করে, যা দেহের সমস্ত কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে।
  • কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিবহন: অক্সিজেন প্রদান শেষে কোষ থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড সংগ্রহ করে ফুসফুসে পৌঁছে দেয়, যেখান থেকে তা নিঃসরণ হয়।
  • রঙ: হিমোগ্লোবিনের কারণে লোহিত রক্তকণিকার রঙ লাল হয়, যা পুরো রক্তকেও লাল রঙ দেয়।

৩. শ্বেত রক্তকণিকা (Leukocytes):
রক্তের শ্বেত রক্তকণিকা (লিউকোসাইট) সংখ্যা কম হলেও এদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রধান কাজ:

  • রোগ প্রতিরোধ: শ্বেত রক্তকণিকা জীবাণু ও ক্ষতিকারক পদার্থের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং দেহকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
  • বিভিন্ন ধরনের কোষ: এটি কয়েকটি ভাগে বিভক্ত, যেমন- নিউট্রোফিল, লিম্ফোসাইট, মনোসাইট, ইওসিনোফিল, এবং বেসোফিল। প্রতিটি কোষের কাজ ভিন্ন, যেমন- নিউট্রোফিল জীবাণু ধ্বংসে বিশেষ ভূমিকা রাখে, লিম্ফোসাইট এন্টিবডি তৈরি করে।

৪. অণুচক্রিকা (Platelets):
রক্ত জমাট বাঁধাতে অণুচক্রিকা অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। এর কাজগুলো হলো:

  • রক্তক্ষরণ বন্ধ: রক্তনালির ক্ষত হলে অণুচক্রিকা ক্ষতস্থানে জমা হয় এবং রক্ত জমাট বাঁধানোর জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান নিঃসরণ করে।
  • দেহের সুরক্ষা: ক্ষতস্থান বন্ধ করার মাধ্যমে এটি শরীরে মাইক্রোবসের প্রবেশ রোধ করে।
  • ফাইব্রিন প্রোটিন উৎপাদন: অণুচক্রিকা রক্ত জমাট বাঁধাতে ফাইব্রিন নামে একটি প্রোটিন তৈরি করে, যা ক্ষতস্থানে একটি জাল তৈরি করে রক্তপ্রবাহ বন্ধ করে দেয়।

রক্তের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ

  • তাপ নিয়ন্ত্রণ: রক্ত তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে তাপ পরিবহন করে।
  • দ্রবণীয় গ্যাস পরিবহন: অক্সিজেন ছাড়াও, রক্ত বিভিন্ন দ্রবণীয় গ্যাস যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড বহন করে।
  • অম্ল-ক্ষার ভারসাম্য রক্ষা: রক্ত শরীরের pH মান নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, যা স্বাভাবিক শারীরবৃত্তিক ক্রিয়াকলাপ বজায় রাখে।

উপসংহার

রক্তের প্রতিটি উপাদান একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে এবং দেহের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে অপরিসীম ভূমিকা রাখে। এ কারণে রক্তকে মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তরল বলে বিবেচনা করা হয়।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url